Pages

Wednesday, December 4, 2013

স্পেশাল: সহজে ও সস্তায় ফোন করতে ভিওআইপি

স্পেশাল: সহজে ও সস্তায় ফোন করতে ভিওআইপি
-ইমরান রেজা অনন্ত

বর্তমানে তুমুল আলোচিত−ভিওআইপি বা ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল প্রযুক্তি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম খরচে কথা বলার জন্য এ প্রযুক্তি বহুল ব্যবহূত এবং জনপ্রিয়। বাংলাদেশে এ প্রযুক্তি বৈধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ভিওআইপি এমন এক প্রযুত্তি, যা দিয়ে খুব সহজেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কথা বলা যায়। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে এটি খুবই সহজ ও সাশ্রয়ী এক মাধ্যম।

ভিওআইপি কী?
প্রথমেই চ্যাট, ভয়েস চ্যাট এবং ইন্টারনেট টেলিফোনির বিষয়গুলো বোঝা যাক। ইন্টারনেট যাঁরা ঘাঁটাঘাঁটি করেন তাঁদের কাছে অবশ্যই এ শব্দগুলো পরিচিত। চ্যাট হলো তাৎক্ষণিক লিখিত বার্তার আদান-প্রদান। ভয়েস চ্যাটে তাৎক্ষণিক লেখা পাঠানোর বদলে ফোনে কথা বলার মতো একে অপরের সঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কথা বলা যায়। বক্তা কিছু বলার সঙ্গে সঙ্গে তা মাইক্রোফোন দিয়ে কম্পিউটারে যায় এবং ইন্টারনেটে তথ্য চলাচলের পথ দিয়েই কথা তথ্যের আকারে (প্যাকেট) আকারে অপরপ্রান্তে পৌঁছে যায়।ফলে শুধু ইন্টারনেট দিয়ে একে অপরের সঙ্গে বিনামূল্যে তাৎক্ষণিক কথা বলতে পারা যায়। এটাই ভিওআইপি।ইন্টারনেট যদি শব্দতরঙ্গ কম্পিউটার থেকে কম্পিউটারে বিনামূল্যে পাঠাতে পারে, তবে কেন তা সাধারণ টেলিফোনে প্রেরণ করা যাবে না? এর সমাধান হিসেবে কম্পিউটার থেকে টেলিফোনে বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে টেলিফোন থেকে টেলিফোনে কথোপকথনের প্রযুক্তি বের হয়। এর আধুনিক রূপ আইপি বা ইন্টারনেট টেলিফোনি প্রযুক্তি, যার পুরোটাই ভিওআইপি প্রযুক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত।

কার্যকারিতা
কথোপকথনের জন্য কম্পিউটার, মোটামুটি উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ, মাইক্রোফোন ও স্পিকার লাগবে।দুই প্রান্তেই একই সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। বর্তমানে বহুল প্রচলিত বিনামূল্যের সফটওয়্যার হলো: ইয়াহু! মেসেঞ্জার, এমএসএন মেসেঞ্জার, স্কাইপি ইত্যাদি।এসবের যেকোনোটি ব্যবহার করে বিনামূল্যে অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। এরপর এগুলোতে ঢুকে কথা বলা বা লিখিত বার্তা আদান-প্রদান করা যাবে বিনামূল্যে। এ ছাড়া নির্দিষ্ট ফি দিয়ে ইন্টারনেট থেকে সাধারণ ল্যান্ডফোন কিংবা মোবাইল ফোনেও কথা বলা যাবে।

খরচ ও সাশ্রয়
ভিওআইপির জন্য ইন্টারনেটের উচ্চগতি দরকার।সাধারণ ইন্টারনেট পদ্ধতি (ডায়ালআপ, ব্রডব্যান্ড, কেব্ল ইত্যাদি) ব্যবহার করেই এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়। যদি ডায়ালআপ ইন্টারনেট (টেলিফোননির্ভর) ব্যবহার করা হয়, তবে প্রতি মিনিট অন্তর নির্দিষ্ট হারে বিল দিতে হবে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে। যদি ব্রডব্যান্ড সংযোগ থাকে, তবে ২৪ ঘণ্টাই ইন্টারনেটের আওতায় থেকে ভিওআইপি ব্যবহার করা যেতে পারে যেকোনো সময়। মাস শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিল দিলেই হলো, যা গড়ে ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা। তবে যে সংযোগই নেওয়া হোক না কেন, তার গতি যেন গড়ে প্রতি সেকেন্ডে চার থেকে পাঁচ কিলোবাইট হয়। ভিওআইপি ব্যবহারে শুধু ইন্টারনেট খরচটিই হয়; ল্যান্ড-ফোনে কল করা ছাড়া বাড়তি খরচ এখানে হয় না।

ভিওআইপি দিয়ে টেলিফোন করা
ইয়াহু! ইন্টারনেট ব্যবহার করে কম্পিউটার থেকে টেলিফোন করার সহজ সুযোগ করে দিয়েছে ব্যবহারকারীদের। কিন্তু কম্পিউটার থেকে কম্পিউটারে ভিওআইপি যেমন বিনামূল্য, টেলিফোনে ফোন করা তা নয়। ন্যুনতম ১০ ডলার বা তার বেশি দামের সময় (ক্রেডিট) কিনলে পৃথিবীর প্রায় সব দেশে ফোন করা যায় কম্পিউটার ও ইন্টারনেট দিয়েই। বেশ কিছু ভিওআইপি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মাসিক চুক্তির ভিত্তিতে (মাত্র ৪০-৫০ ডলারের বিনিময়ে) মাসব্যাপী যেকোনো দেশে যতক্ষণ ইচ্ছা ফোন করার সুযোগ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে অর্থ লেনদেন ইন্টারনেটে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে করা সহজ ও নিরাপদ।

মোবাইল ফোন দিয়ে ভিওআইপির ব্যবহার
কম্পিউটার থেকে কম্পিউটারে বিনামূল্যে কথা বলা যায়; তবে আজকাল যে মোবাইল ফোনেও ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়ে কি একই সুবিধা পাওয়া যাবে? আনন্দের বিষয় এই যে এরও সমাধান হয়ে গেছে। বর্তমানে আমাদের দেশ থেকেই সম্পুর্ণ বিনামূল্যে (ইন্টারনেট খরচ ছাড়া) মোবাইল দিয়ে ভয়েস চ্যাট করা যায়। তবে এর জন্য ভিওআইপি সমর্থন করে এমন মোবাইল ফোন এবং উচ্চগতির মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ দরকার। বর্তমানে নকিয়াসহ অনেক নির্মাতা ভিওআইপিসহ মোবাইল ফোন বাজারে বিক্রি করছে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে সেসব মোবাইলের দাম একটু বেশিই পড়ছে। তবে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার তুলনায় সে দাম তেমন বেশি নয়। নকিয়ার নির্মিত ই-সিরিজ, এন-সিরিজসহ বেশ কিছু ডাটা কমিউনিকেটর মোবাইল দিয়ে ভিওআইপি ব্যবহার করা যাচ্ছে। এ ছাড়া সনি-এরিকসন, মটোরোলার বেশ কিছু প্রচলিত মোবাইল ফোনও এ সুবিধা দিতে পারে।আজকাল দেশের মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (যেমন−গ্রামীণফোন, সিটিসেল, ওয়ারিদ ইত্যাদি) তুলনামূলক দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে।মোবাইল ফোন দিয়েই মাসিক ৮০০ থেকে এক হাজার টাকার বিনিময়ে সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাচ্ছে।

বিনামূল্যে ভিওআইপি সফটওয়্যার
ধরা যাক, দেশ বা বিদেশ থেকে কোনো ব্যক্তি তাঁর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলেন। এ ক্ষেত্রে প্রতি মাসে বিপুল অঙ্কের ফোন বিল না দিয়ে ভিওআইপির আশ্রয় নিলে খরচ অনেক সাশ্রয় হতে পারে। তবে দুইজনের কাছেই ভিওআইপি প্রযুক্তি আছেএমন মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। http://www.fring.com অথবা http://www.gizmoproject.com ঠিকানার ওয়েবসাইটে বিনামূল্যে ভিওআইপির সফটওয়্যার পাওয়া যায়। এটি মোবাইলফোনসেটে নামিয়ে (ডাউনলোড) নিতে হবে। এসব সফটওয়্যার দিয়ে ইয়াহু!, এমএসএন বা স্কাইপির মতো সফটওয়্যারের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে স্বাভাবিক চ্যাট করা যায়। পাশাপাশি ভয়েস চ্যাটের সুবিধাও এতে দেওয়া হয়েছে। সফটওয়্যার চালু করে এতে যেকোনো নাম ব্যবহার করে প্রথমে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে হয়, সে নাম দিয়েই সব সময় প্রবেশ করতে হয় এবং অন্যপক্ষ সে নাম দিয়েই তাকে চিহ্নিত করে থাকে। পরে অন্যান্য চ্যাটরুম যুক্ত করে সেখানকার বন্ধুবান্ধবের সঙ্গেও চ্যাট, ভয়েস চ্যাটিং, ছবি ও গান আদান-প্রদান করা যায়। প্রোগ্রাম বন্ধ না করলে বা ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন না করলে সার্বক্ষণিক এ সফটওয়্যার সক্রিয় থাকে। ফলে যেকোনো সময় কল আদান-প্রদান করা যায়। অসীম সময়ের ইন্টারনেট সংযোগ যদি না থাকে, তবে প্রতি কিলোবাইট হিসেবে অর্থ প্রদান ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে। যদি মোবাইল ফোনে ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি থাকে , তবে তা দিয়েও ইন্টারনেট ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাংলাদেশে ভিওআইপি প্রযুক্তির সম্ভাবনা
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ভিওআইপির সুবিধা নেওয়া সম্ভব।তবে এ জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু নীতিমালা এবং সঠিক উদ্যোগের। ইতিমধ্যে এটি কার্যকর রয়েছে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে। ফলে সেসব দেশে অতি সামান্য খরচে বিদেশে ফোন করে কথা বলা যাচ্ছে বহুক্ষণ। ভিওআইপি প্রি-পেইড কার্ড কিনতে পাওয়া যায় যেকোনো দেশে। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নবিত্ত শ্রেণীর অসংখ্য মানুষ মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে বসবাস করে। তাদের জন্য ভিওআইপি একটি ভালো সমাধান। আবার গ্রামের সুবিধাজনক স্থানে ভিওআইপি সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ফোনসেন্টার গড়ে তোলা যেতে পারে। এমনকি টেলিসেন্টারেও এর ব্যবহার চলতে পারে। 

No comments:

Post a Comment