আ দ ব কে তা : মোবাইলের ব্যবহার ও যোগাযোগ দক্ষতা...
- মোহাম্মদ মারূফ খাঁন
একটা গান আছে না? গাড়ি চলে না চলে না চলে না
রে, গাড়ি চলে না...। যান্ত্রিক সভ্যতাও আমাদের অনেক সময় অচল করে দেয়।
যেমন, চাইনিজ মোবাইলের বদৌলতে আমাদের প্রায়ই বিভিন্ন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
ফলে অনেক সময়ই মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, মনে হয় যেন
নির্বাসনে গেছি। সর্বস্তরের মানুষের কাছে মোবাইল নিঃসন্দেহে একটি অতি
প্রয়োজনীয় এবং সার্বক্ষণিক ব্যবহার্য বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সভ্যতায়
এর প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করারও কোনো উপায় নেই। কিন্তু এই মোবাইলের
যাচ্ছেতাই এবং যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের ব্যক্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।
সেদিক থেকে মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের যত্নবান বা সচেতন হওয়া
আবশ্যক।
যেমন—বেশি আওয়াজ করে কথা না বলা ভালো। আবার পাবলিক প্লেসে যেমন
বাসে, ট্রেনে... ফানে কথা না বলাই ভালো। মানে কেউ ফোন করলে আপনি বলতে
পারেন—‘আমি বাসে,... পরে কলব্যাক করছি।’ অনেকে আবার একান্ত ব্যক্তিগত
কথাবার্তা পাবলিক প্লেসে মোবাইলে বলে, এটা অবশ্যই অন্যদের প্রাইভেসিকে
ক্ষতিগ্রস্ত করে। আসলে আমাদের এমনভাবেই কথা বলা উচিত যেন আশপাশে অবস্থানরত
অন্যরা বিরক্ত না হন। অনেকেই ফোনে জোরে আওয়াজ করে করে কথা বলে এটা
নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক।
রিং হলে অবশ্যই ফোন রিসিভ করুন। সংক্ষেপে কথা শেষ
করতে পারাটা বড় দক্ষতা; ফলে সংক্ষেপে কথা সারুন। ফোনের রিংটোনের আওয়াজ ছোট
করে রাখুন। ব্যস্ততার কারণে যদি ফোন ধরা সম্ভব না হয় তবে ফোন বন্ধ করে
রাখুন, আর একান্ত প্রয়োজন হলে মিউট করে রাখুন বা মিসকল অ্যালার্ট অপশন
রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন। মসজিদ, হাসপাতাল, স্কুল—এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোতে
অবশ্যই মোবাইল মিউট করে রাখুন।
অনেকেই বিভিন্ন ধরনের রিংটোন ব্যবহার
করেন। রিংটোন পছন্দ করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা ভালো, কারণ রিংটোন আমাদের
দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রকাশ করে। মনে রাখা ভালো ফোন আমাদের, কিন্তু ওই ফোনে মূলত
অধিকার অন্যের। ফোন রিসিভ করে অনেকেই বেশ বিরক্তভাবে কথা শুরু করি, এটা
একেবারেই ঠিক নয়; কারণ আমাদের ফোন আছে বলেই অন্যরা ফোন করেছেন। আমাদের
অধিকারই নেই অন্যকে কষ্ট দেয়া। অনর্থক কাউকে ফোন করবেন না। ফোন করলেই নিজের
পরিচয় দিন এবং যাকে চাচ্ছেন সে-ই ফোন ধরেছেন কিনা নিশ্চিত হয়ে কথা বলুন।
অন্তত মোবাইলে কাউকেই বলা উচিত নয়—‘এটা কোন জায়গা?’ মনে রাখা ভালো, মোবাইল
কোনো স্থানে স্থির থাকে না। অবশ্যই মোবাইলে কাউকে অধিক রাতে বা ব্যক্তিগত
সময়ে ফোন করা উচিত নয়। কথা শেষ হলে অনুমতি নিয়ে কথা শেষ করুন, হুট করে কল
কেটে দেবেন না; এটা আমাদের আদবের নেতিবাচক দিককেই পরিচিত করে তোলে।
মোবাইলে
মিসকল দিয়ে কাউকে বিরক্ত করা একেবারেই অনুচিত কাজ। গাড়ি বা যে কোনো
যানবাহন চালানো অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার করবেন না। বদ্ধ স্থানে মোবাইল
ব্যবহার না করা ভালো। যে কোনো ধরনের সেবা দানকালে মোবাইল বন্ধ রাখুন।
মোবাইলে অন্যের অনুমতি না নিয়ে ফটো তুলবেন না। কিছু ক্ষেত্র আছে অনুমতি
নিয়েও ফটো তোলা ঠিক নয়, সেটা কমনসেন্স দিয়ে বুঝে নেয়া ভালো। কারও নাম্বার
অনুমতি ছাড়া অন্যকে প্রদান করা থেকে বিরত থাকা ভালো। কারও সঙ্গে মিটিং
করছেন, এ সময় মোবাইল বন্ধ রাখাই ভালো, যদি মোবাইল রিসিভ করতেই হয় তবে
অনুমতি নিয়ে মোবাইল রিসিভ করুন। রাস্তা পারাপাররত অবস্থায় বা রাস্তায় হেঁটে
চলা অবস্থায় মোবাইল যত কম ব্যবহার করা যায় তত ভালো। আমাদের সন্তানদের
মোবাইল ব্যবহারের দিকে নজর রাখুন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া অন্যের মোবাইল নম্বর
না নেয়া ভালো। রাত জেগে ফোন করা থেকে বিরত থাকা ভালো। রাতে মোবাইল বন্ধ
রাখা ভালো, আর যদি খুলেই রাখেন সেক্ষেত্রে রিং হলে বিরক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়
নয়। কারো জীবনে এমনটা না ঘটুক! মানুষের জীবনে কখন কি ঘটে বলা মুশকিল।
রাত-বিরাতেও অনেক সময় অনাকাঙ্খিত কোনো ঘটনা ঘটে যেতে পারে। যে কোনো বিপদ
আপদে কাছের মানুষ, আত্মীয় স্বজন কিংবা পাড়া প্রতিবেশীরা আপনার সাহায্য
চাইতেই পারে। এরকম সম্ভাবনা থাকলে রাতে মোবাইল চালু রাখার প্রয়োজন আছে।