Pages

Thursday, July 14, 2011

কম্পিউটারের জায়গা দখল করছে মোবাইল ফোন

কম্পিউটারের জায়গা দখল করছে মোবাইল ফোন

-জিয়াউদ্দিন সাইমুম

এক দশক আগেও দেশবাসী ভাবতে পারেনি মোবাইল ফোনই একদিন ক্যামেরার উষ্ণ জমিনটুকুর গর্বিত মালিক হয়ে যাবে। একই কায়দায় হাতঘড়িও এখন মোবাইল প্রযুক্তির কাছে আচ্ছা করে খাবি খাচ্ছে। এর পরের পালা কি কম্পিউটারের? টেক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মোবাইল অচিরেই এ হাইটেক ডিভাইসটিরও ভাত মারবে। কারণ এক সময়কার রেফ্রিজারেটরের সমান আকৃতির কম্পিউটার অর্ধশতাব্দীতে ডেস্কটপে রূপ নিয়েছে। কিন্তু মোবাইল আগ্রাসনে ওটা এখন ল্যাপটপে পরিণত হয়ে ‘জাত’ ধরে রাখতে চাইছে। ল্যাপটপ নোটবুকের আকারে বনে গেছে সুদৃশ্য পামটপে। কিন্তু ল্যাপটপের ফাংশন আর অনুভূতি যদি পামটপে মেলে, তাহলে খবর আছে ল্যাপটপেরও। টেক বিশেষজ্ঞরা অন্তত এটাই ধারণা করছেন।
ওই ডিভাইসটিকে আপনি কী বলবেন— যাতে রয়েছে একটি সুদৃশ্য স্ক্রিন, একটি পরিমিত কিবোর্ড, কন্টাক্ট, ই-মেইল আর ডকুমেন্টের মতো ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের জম্পেশ স্টোরেজ, আঙুলের আলতো ছোঁয়ায় অডিও-ভিডিও ফাইল খোলার চৌকস সামর্থ্য, গেমস আর স্প্রেডশিট প্রোগ্রাম, রয়েছে যোগাযোগের অনন্য উপাদান। উত্তরটা অনেকের জিভের ডগায় চলে আসায় এক নিঃশ্বাসে হয়তো কেউ কেউ বলবেন, কেন কম্পিউটার! জনাব, হিসাবে ভুল হচ্ছে। কারণ ওটা যে মোবাইল ফোন—হালের আধুনিক। কেউ কেউ হালের ক্রেজ স্মার্ট ফোনের অবিশ্বাস্য তেলেসমাতি দেখে মুখস্ত বলে দিচ্ছেন, ‘আরে! এটার তো জন্মই হয়েছে ডেস্কটপ আর ল্যাপটপকে জাদুঘরে পাঠাতে।’ হ্যাঁ, বাংলাদেশের নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেভাবে দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠাতে চান, প্রযুক্তিবিদরাও একইভাবে কম্পিউটারের জায়গা জাদুঘরে আগেভাগে বুক করে রাখতে চাইছেন।
প্রসঙ্গটি তুলতেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকের এমডি এবং সিইও আহমেদ আবু দোমা বললেন, আমেরিকার মতো উন্নত দেশে ৫৭ শতাংশ ইন্টারনেটের কাজ মোবাইলের মাধ্যমে চলছে। অর্থনৈতিক ও বাস্তবতার দিক থেকে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে ইন্টারনেট ছড়িয়ে দিতে মোবাইল ফোনই সবচেয়ে বেশি কার্যকর প্রযুক্তি। আমি বিশ্বাস করি, মোবাইল ফোন কম্পিউটারের জায়গা দখল করে নিচ্ছে।
সম্প্রতি গ্রামীণফোন ‘মোবিটাকা’ সার্ভিসের মাধ্যমে তার গ্রাহকদের ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বুকিংয়ের সুযোগ করে দিয়েছে। আগামীতে বাংলাদেশেও যে কোনো ধরনের টিকিট, টাকার লেনদেন, উকিল নোটিশ মোবাইল বাটনে টিপেই সারতে পারবেন দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে, যে কোনো সময়। মোবাইলে এসব সুবিধা মিললে কম্পিউটারের কি-বোর্ডে হামলে পড়ার আগ্রহ থাকবে কার? অন্তত ডিজুস প্রজন্ম মোবাইল প্রযুক্তিকে রাতদিন সালাম জানাবে।
আপাতদৃষ্টিতে পিসি আর ল্যাপটপ হটানো বেশ কঠিনই মনে হতে পারে। কারণ ২০০৯ সালেই যে প্রযুক্তিটির বিক্রি সংখ্যা ২০ কোটি পিস ছাড়িয়ে গেছে, যে খাতে ব্যয় হয়েছে ২০ হাজার কোটি ডলারের বেশি, সেই প্রযুক্তি কি রাতারাতি হাওয়া হয়ে যাবে? মোটেও না। তবে মোবাইল ফোন পিসির ঘণ্টা ঠিকই বাজিয়ে রেখেছে।
টেক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জটিল ও অত্যাধুনিক বেশকিছু কাজে পিসি আর ল্যাপটপ থেকেই যাবে। কারণ একজন আর্কিটেক্ট যদি ডিজাইন প্রোগ্রাম চালাতে চান, তাহলে পিসিই হবে তার শ্রেষ্ঠ অবলম্বন। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার যদি নতুন ধরনের সার্কিটের ডিজাইন তৈরি করতে চান, তাহলে তিনি পিসিকেই প্রাধান্য দেবেন। ফিল্ম মেকার যদি ভিডিও এডিট করতে চান, তাহলে পিসিই গ্রেট! কিন্তু গণমানুষের হাতের তালুতে ঠাঁই পাওয়া মোবাইল ফোনকে চোখ রাঙানোর ক্ষমতা কম্পিউটার দিন দিন হারিয়ে ফেলছে। বিষয়টাকে সম্ভবত এভাবেই বলা যায়—জটিল কাজে কম্পিউটার আরও দীর্ঘ কৌলীন্য বজায় রাখবে আর মোবাইল ফোন গণমানুষের কাতারে এসে গণসঙ্গীতের কোরাস তুলবে।
ব্যাপারটা অনুমান করতে পেরে কিছু ঘড়েল প্রযুক্তিবিদ কম্পিউটারে ভয়েস আদান-প্রদান আরও সহজ করতে চাইছেন। ফলাফল যাই হোক না কেন, এতে জয় কিন্তু মোবাইল ফোনেরই।
কম্পিউটারের আরও আধুনিকায়ন সম্ভব। তবে প্রযুক্তিবিদরা একবাক্যে মানছেন, কম্পিউটারের চেয়ে মোবাইল ফোনেরই সম্ভাবনা বেশি। কারণ কম্পিউটারের বিবর্তন হচ্ছে ধীরগতিতে। অথচ মোবাইল ফোনের বিবর্তন কল্পনাকেও হার মানাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মোবাইল ফোন নিজেই এখন কম্পিউটার হয়ে উঠছে। টেক-পাগল লাখ লাখ জাপানি এখন মোবাইল ফোন ছাড়া ভিন্ন কিছু ভাবতেই পারছেন না। কারণ ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যাকআপ সার্ভিস এখন মোবাইলে পাওয়া যাচ্ছে।
বিজ্ঞানী কেনেথ বোল্ডিংয়ের জ্ঞান-বন্দনা তত্ত্বটিকে একটু ঘুরিয়ে বললে হয়তো এভাবে বলা যাবে, ‘মোবাইলের সম্ভাব্য শক্তি এখন অতি দুর্দান্ত। সে আর পেছনে পড়বে না। দুধে মাখন আছে, আমাদেরই তা মন্থন করে নিতে হবে। মোবাইলই শক্তি এবং আকাশটাই তার সীমানা।’