কৃষি তথ্য সেবায় ‘কৃষি কল সেন্টার’ এর ভূমিকা
- ড. ফারুক-উল-ইসলাম*এ এম সামসুদ্দৌলা**
কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন
এবং কৃষিতে আধুনিক ও নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় কৃষির সনাতনী
জ্ঞান আজ আর যথেষ্ট নয় কৃষিকাজে। পরিবর্তিত কৃষিতে কৃষককে তাই নিজের
জ্ঞান-অভিজ্ঞতার পাশাপাশি আজ অনেকখানি নির্ভর করতে হয় উন্নত প্রযুক্তি ও
আধুনিক জ্ঞানের ওপর যা কৃষককে তাৎক্ষণিক কার্যকর সমাধান দিয়ে তার জমির ফসল ও
গবাদিপ্রাণীকে রক্ষা করবে; বন্যা, ঘূর্ণিঝড় বা যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের
সম্ভাব্য বা সংঘটিত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সহযোগিতা করবে। এ সময়ের কৃষক সধারণত
যেসব জায়গা থেকে সহায়তা নিয়ে থাকে সেগুলো হল- নিজ এলাকার অভিজ্ঞ চাষি,
এনজিও বা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা ‘কৃষি ক্লাব/ স্কুল’ বা সম্প্রসারণ
কর্মী, ইনপুট বিক্রেতা ও পরিসেবা প্রদানকারী, স্থানীয় জ্ঞান-তথ্য কেন্দ্র,
অথবা উপজেলা পর্যায়ের তথ্য কেন্দ্র। কিন্তু কৃষিপ্রযুক্তি ও পদ্ধতির নিয়ত
পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে পাল্লা দিতে আমাদের কৃষকদেরও প্রয়োজন বৈশ্বিক
অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ।
অন্য দিকে, অভিজ্ঞতা ও বিশেষজ্ঞতায় সমৃদ্ধ
হওয়ার পরও আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ পদ্ধতিকে আরও আধুনিক ও
আইসিটি-জ্ঞান-সমৃদ্ধ করার জন্য বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে এটা
নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, আমাদের দেশের লাখ লাখ ক্ষুদ্র চাষি ও উদ্যোক্তার
জন্য কম খরচে উন্নত তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারে ‘আইসিটি’। বিশেষ করে
কৃষি ব্যবসায় ও ক্ষুদ্র আকারের চাষ- আবাদে সহায়তার ক্ষেত্রে, মোবাইল
ফোনভিত্তিক কল সেন্টারগুলো এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা শুরু করেছে।
এ বছরের (২০১৩) এপ্রিল মাস পর্যন্ত
বাংলাদেশে মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে; যা গত বছরে
(২০১২) ছিল ৯ কোটি। (নিচের ছক দেখুন)।
মোবাইল ফোনের ক্ষুদে বার্তা বা কমিউনিটি
রেডিওর মতো, মোবাইল ফোনভিত্তিক কল সেন্টার নিৎসন্দেহে কৃষি সংক্রান্ত তথ্য ও
যোগাযোগ সেবাকে নতুন মাত্রায় উন্নীত করার সম্ভাবনা ধারণ করে। কৃষি কল
সেন্টার কেবল বাংলাদেশেই নয় বরং পৃথিবীর অনেক দেশের অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক
উদ্যোগে ভূমিকা রাখছে। ভারতে ‘কিষাণ কল সেন্টার’ এর গ্রাহক সংখ্যা তিন
লাখের বেশি; ভারত সরকার তাদের বিনা পয়সায় ফোন করার সুযোগ করে দিচ্ছে।
কেনিয়াতেও এ ধরনের উদ্যোগ রয়েছে।
কৃষি কল সেন্টারটি প্রাকটিক্যাল অ্যাকশন
বাংলাদেশ ও এগ্রিকালচার ইনফরমেশন সার্ভিসের (এআইএস) একটি যৌথ উদ্যোগ। এ
সেন্টারের লক্ষ্যগুলোর মধ্যে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত তাহল- *স্বল্পতম সময়ে
কৃষি সংশিস্নষ্ট বিষয়াদি যেমন পশুপালন, মৎস্য, পুষ্টি ও আবহাওয়া বিষয়ে
তথ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, বিশেষ করে দরিদ্র কৃষকদের জন্য। * বিশেষজ্ঞ
কৃষিবিদদের পরামর্শ। * বিষয়ভিত্তিক, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা। *
কৃষকদের জন্য স্থানীয়ভাবে সময়োপযোগী কনটেন্ট তৈরি করা।
প্রাকটিক্যাল অ্যাকশন বাংলাদেশ, এআইএস এবং
কানেক্ট-৭ (টেকনিক্যাল পার্টনার) এর মধ্যে ২০১১ সনের জুন মাসে, কল সেন্টার
বিষয়ে একটি প্রাথমিক ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি মতে, এআইএস
কার্যালয়ের একটি অংশে কল সেন্টারটি স্থাপন করা হয় এবং ২০১২ সনের জুন মাসে
পরীক্ষামূলকভাবে এর কার্যক্রম শুরু করা হয়। এরই মধ্যে এ কল সেন্টার ১৮
হাজার ফোন কল পেয়েছে, যার মধ্য থেকে ২০ হাজার অনুসন্ধান (enquiry) নিবন্ধিত
হয়েছে। মোট ৯ হাজার অনুসন্ধানের উত্তর তাৎক্ষণিকভাবে দেয়া হয়েছে এবং বাকি
অনুসন্ধানগুলোর উত্তর বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করে পরবর্তীতে গ্রাহকের কাছে
পৌঁছে দেয়া হয়েছে। আমরা আমাদের গ্রাহকদের মধ্য থেকে চার হাজার গ্রাহকের
‘ফলো আপ’ করেছি এবং জানতে পেরেছি যে, তারা আমাদের দেয়া তথ্য সন্তোষজনকভাবে
কাজে লাগাতে পেরেছে।
আমাদের এ কার্যক্রমকে আরও কার্যকরভাবে
সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে, সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় একটি
‘আনুষ্ঠানিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর’ করার অনুমতি দিয়েছে। কৃষি কল
সেন্টারটি ‘রাজস্ব আয়কারী’ ব্যবসায়-মডেল ও কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করলে টেকসই
হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মূল্য লক্ষ্য হল কৃষি
মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিক সমর্থন নিয়ে বিশাল সংখ্যক গ্রাহকদের কাছে এ
সেবাকে আরও কার্যকরভাবে পৌঁছে দেয়া।
কার্যক্রম পরিচালনা মডেল
: এগ্রিকালচার ইনফরমেশন সার্ভিস (এআইএস) কল সেন্টারটিকে তার কার্যালয়ে
স্থাপনসহ বিদ্যুৎ সরবরাহ ও কনটেন্ট সহায়তা করছে। কল সেন্টারটি স্থাপনের সময়
আমরা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি অথরিটি (বিআরটিএ) প্রদত্ত
গাইডলাইন অনুসরণ করেছি। বর্তমান অবস্থা : দুটি বাড়তি (Standby) সার্ভারসহ
মোট চারটি সার্ভার; ফোন-কল পরিচালনার জন্য IVR একটি এবং কনটেন্ট
ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অ্যান্ড ক্লায়েন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (CMS)
পরিচালনার জন্য আরেকটি; স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকলেও যাতে
অন্তত ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে পারে, সেজন্য
সেন্টারটির নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যাক-আপ রয়েছে। সফটওয়্যার-এর ক্ষেত্রে,
কল-সার্ভারটি একযোগে ৪০টি কল রিসিভ-পূর্বক সেবা দিতে সক্ষম। কিন্তু এ
মুহূর্তে আমরা ৫ জন অপারেটরের মাধ্যমে গ্রাহকসেবা দিচ্ছি। গ্রাহকসেবা যে
কোনো মোবাইল ফোন থেকে (GSM/CDMA/PSTN/SIP) একটি নির্দিষ্ট নাম্বার
(০৯৬৩৩১২৩১২৩) ফোন করতে পারেন এবং ওঠজ এর নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের মোবাইল
ফোন থেকে ১/২/৩ চাপ দিয়ে তাদের কাঙিক্ষত অনুসন্ধানের বিষয়টি জেনে নিতে
পারেন।
আমাদের জ্ঞান-তথ্য সেবা কার্যক্রমের সাথে কল সেন্টারের সম্পৃক্ততা :
আমাদের কল সেন্টার-এর পাঁচ জন অপারেটরের মধ্যে তিনজন কৃষি-স্নাতক (কৃষি,
ভ্যাটেনারি এবং ফিসারিজ); বাকি দু’জন মাঠ পর্যায়ের কৃষি সংক্রান্ত সমস্যা
সমাধানে বিশেষজ্ঞ। এছাড়াও আমাদের সাথে যুক্ত রয়েছেন ছয়জন ‘এক্সটার্নাল’
বিশেষজ্ঞ, যাদের সাথে প্রয়োজন হলে কল সেন্টার গ্রাহকগণকে মোবাইল ফোনের
মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ করিয়ে দেয়া হয়।
বাংলাদেশের আটটি ‘এগ্রো ইকনোমিক-জোন’ এর
কৃষক এবং সম্প্রসারণ কর্মীদের মধ্যে পরিচালিত জরিপের মাধ্যমে পাওয়া ৪৫০০টি
কৃষিভিত্তিক সমস্যার সমাধানসমূহ নিয়ে প্রাথমিকভাবে আমাদের কনটেন্ট
ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অ্যান্ড ক্ল্যায়েন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম CMS) শুরু
হয়। সংগ্রহীত সবগুলো সমস্যা এবং সেগুলোর সমাধানসমূহ জাতীয় পর্যায়ে
বিশেষজ্ঞদের দিয়ে গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়েছে। আমাদের ৩০টি জ্ঞান
কেন্দ্রের (জ্ঞানেরহাট) ৩০০ জন সম্প্রসারণ কর্মী কল সেন্টারটির পরীক্ষামূলক
পর্যায়ে এর গ্রাহক ছিল। কল সেন্টার অপাটেরগণ তাদের নিজস্ব জ্ঞান, অথবা
কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অ্যান্ড ক্ল্যায়েন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম
(CMS)সহায়তা নিয়ে গ্রাহকগণের অনুসন্ধান উত্তর দিয়ে থাকেন। এছাড়াও তারা
প্রয়োজন অনুযায়ী, গ্রাহককে ইন্টারনাল বিশেষজ্ঞ অথবা এক্সটারনাল বিশেষজ্ঞের
সাথে যোগাযোগ ঘটিয়ে দেন। কল সেন্টার অপারেটর যদি মনে করেন, কোনো নির্দিষ্ট
গ্রাহককে হাতে কলমে সেবা দেয়ার প্রয়োজন আছে, তবে তিনি আমাদের সংশ্লিষ্ট
সম্প্রসারণ কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে ঐ গ্রাহককে সরাসরি সেবা দেয়ার অনুরোধ
করেন।
প্রতিটি নতুন সমস্যা এবং তার সমাধানগুলোর
গুণগত নিশ্চিত করে আমাদের কনটেন্ট ম্যানেমেন্ট সিস্টেম অ্যান্ড ক্লায়েন্ট
ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (CMS) -এ সংরক্ষণ করা হয়। সব নতুন গ্রাহককেও ভবিষ্যতে
ফলো-আপ এবং যোগাযোগের জন্য নিবন্ধিত করা হয়। গ্রাহকগণের সঙ্গে সকল কথোপকথন
রেকর্ড করে ‘কল সার্ভারে’ ছয় মাসের জন্য সংরক্ষণ করা হয়।
চাজিং : বর্তমান পাইলট
পর্যায়ের ০৯৬৩৩১২৩১২৩ নাম্বারের ‘হেল্পলাইন’ এ একযোগে ১০টি ফোনের সঙ্গে
যুক্ত হওয়া যায়; প্রতিটি কলের জন্য গ্রাহককে মিনিটপ্রতি ৬৮ পয়সা দিতে হয়।
কল সেন্টারটির ব্যাপক প্রচারের জন্য বাংলাদেশ টেলিভিশনে অল্পদিনের মধ্যেই
একটি বিজ্ঞাপন প্রচার করা হবে। বিজ্ঞাপন নির্মাণের কাজ এরই মধ্যে শেষ
হয়েছে। আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিটিআরসির কাছে কল সেন্টারের জন্য একটি
ছোট আকারের নাম্বার (পাঁচ ডিজিটের) পেতে আবেদন জানাব। আমাদের হিসাব মতে,
পাঁচজন অপারেটর (ছয়জন এক্সটারনাল বিশেষজ্ঞসহ) যদি প্রতি দিন ১০ ঘণ্টা করে
বছরে দুই লাখ গ্রাহককে সেবা দেয় তবে এক বছরের জন্য কল সেন্টারটি পরিচালনা
করতে খরচ লাগবে ১৫ লাখ টাকা। কিন্তু বার্ষিক ১২ টাকা সদস্য চাঁদার মাধ্যমে
ক্রমান্বয়ে দুই লাখ চাষিকে নিবন্ধনের আওতায় এনে এর চলতি ব্যয়ভার বহন করা
সম্ভব। এছাড়া অন্যান্য রেভিনিউ জেনারেশন মডেল ও প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে
টেলিকম, সফট্ওয়্যার, কন্টেন্ট নির্মাতা অংশীদারিত্বের মাধ্যমেও বাসত্মবায়ন
করা যেতে পারে। পাশাপাশি সরকারও লাখ লাখ দরিদ্র প্রানিত্মক চাষিদের জন্য
‘টোল-ফ্রি’ সার্ভিসের উদ্যোগ নিতে পারে।
সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জগুলো:
*জনবহুল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনভিত্তিক সেবার অনন্য সম্ভাবনা রয়েছে।
*আশা করা যায় তৃণমূলে ইন্টারনেটের বর্তমান ধীরগতি ও দুষ্প্রাপ্যতা অচিরেই কেটে যাবে।
*স্বল্প মূল্যে বাজারে মাল্টিমিডিয়া ফোনের সহজলভ্যতা।
*কনটেন্ট প্রস্তুতকারী ও পুনর্বিন্যাসকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আইসিটির সহায়তায় অধিকতর উপযোগী তথ্য উপকরণ নির্মাণে উৎসাহী।
*কল সেন্টারগুলোর সহায়তা কার্যক্রম অন্যান্য তথ্যসেবা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যেতে পারে।
*প্রাইভেট টেলিকম প্রতিষ্ঠান, সফট্ওয়্যার প্রতিষ্ঠান, মোবাইল সেট প্রস্তুতকারী ও পরিবেশকরা এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসবেন।
*সরকার দরিদ্র কৃষকদের জন্য ‘টোল-ফ্রি’ সার্ভিসের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
*কল সেন্টারের সামর্থ্যের তুলনায় এর গ্রাহকসংখ্যা বেড়ে গেলে সেবার মান পড়ে যেতে পারে।
টবিল : মোবাইল ফোন গ্রাহক
অপারেটর সক্রিয় গ্রাহক
গ্রামীণফোন ৪,২৩,৭২,০০০
বাংলালিংক ২,৬৩,০৯,০০০
রবি ২,১৬,৯৭,০০০
এয়ারটেল ৭৫,৫৭,০০০
সিটিসেল ১,৪২,৫০০
টেলিটক ১,৮৪,৪০০
মোট ১০,১২,০৫,০০০
* প্র্যাকটিক্যাল অ্যাকশন, বাংলাদেশ
Source: http://ais.gov.bd
Almost all of the benefits of agricultural cultivation methods. It may be difficult to separate the cost of the system. Cultivation of agricultural development need to know more. Therefore, the development of agriculture and farming Agricultural cultivation
ReplyDeleteWill help you.
Agricultural cultivation
Will help you.
Home page